মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পাঁচটি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের চারটি গত পাঁচ মাস ধরে বিকল থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে বাড়তি টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিটে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়। প্রথমদিকে লোকবল সংকটের কারণে ডায়ালাইসিস দেওয়া যেত না। এভাবে বছরখানেক পার হয়ে যায়। ২০২২ সালে ডায়ালাইসিসের লোকবল বাড়ানো হলে ৫টি যন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু হয়।
২০২৩ সালের দিকে দু-একটি যন্ত্র নষ্ট হতে শুরু করে। বাকী যন্ত্র গুলো দিয়ে কোনোমতে কাজ চালানো হয়। এরই মধ্যে টানা এক বছর নষ্ট ছিল দুইটি যন্ত্র। পরে সেগুলোকে মেরামত করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাসে একে একে চারটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য তিনি ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নিমিউয়ের একটি কারিগরি দলের সদস্যরা যন্ত্রগুলো দেখে গেছেন।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
গত ২ ফেব্রুয়ারি অপর এক পত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালককে ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য জানায়। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো সরবরাহ করা হয়। ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান একাধিকবার মেরামত করেছিল। কিন্তু মেরামতের কিছুদিন পর আবার নষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নিমিউ থেকে জরিপ প্রতিবেদন (সার্ভে রিপোর্ট) দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ওয়ারেন্টির মেয়াদকাল নেই, সার্ভিস ও অপারেশন ম্যানুয়াল নেই এবং চুক্তিনামা না থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোনোটির পাওয়ার সাপ্লাইয়ে আবার কোনোটির মাদারবোর্ড সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কোনো কোনো রোগীকে এক বা দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। বর্তমানে একটি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মাধ্যমে সপ্তাহে চারজন রোগীকে ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি প্রায় ৪০ জন রোগী সিরিয়ালে রয়েছেন। তবে যন্ত্রগুলো নষ্ট হওয়ায় তাদের ডায়ালাইসিস করানো যাচ্ছে না। প্রত্যেক রোগী প্রতিবার ৪০০ টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারেন। বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করতে রোগীকে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা খরচ হয়।
জয়রা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন নামে এক কিডনি রোগী জানান, ‘ প্রতি সপ্তাহে আমাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ৪০০ টাকা খরচে হাসপাতাল থেকে করছিলাম। এখন যন্ত্র নষ্ট থাকায় প্রাইভেট একটি হাসপাতালে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
আরও বেশ কয়েকজন কিডনি রোগীর সঙ্গে কথা হলে তারা প্রত্যেকেই বলেন, গরীব অসহায় রোগীরা বাড়তি টাকা খরচে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: চরম সংকটে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা
মানিকগঞ্জ জেলা ড্যাবের সভাপতি ও জেনারেল হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, কিডনি রোগীদের জরুরি চিকিৎসার মাধ্যমই হচ্ছে কিডনি ডায়ালাইসিস করা। এ হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র বিকল হওয়ায় কিডনি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। যন্ত্রগুলো সচল না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামত বা নতুনভাবে স্থাপনে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।